কেন আমাদের সুন্নী সমাজে প্রিয়নবীর ﷺ আহলে বায়তের ব্যাপক চর্চা নেই?

কেন আমাদের সুন্নী সমাজে প্রিয়নবীর ﷺ আহলে বায়তের ব্যাপক চর্চা নেই?


 "কেন আমাদের সুন্নী সমাজে প্রিয়নবীর ﷺ আহলে বায়তের ব্যাপক চর্চা নেই? : কিছু আপত্তির জবাব"
আমি এখানে ব্রড স্পেকট্রামে কথা বলছি, সুন্নী বলতে শুধু তাসাউফপন্থী সুন্নী না। বরং কওমি-দেওবন্দী, আহলে হাদিস, সালাফি সবাইকে বুঝাচ্ছি। যেহেতু ইচ্ছায় অনিচ্ছায়, মানুক না মানুক তারা সবাই নিজেরা নিজেদেরকে সুন্নী দাবি করে।
আমাদের সুন্নী সমাজে আহলে বায়তের ব্যাপক চর্চা নেই৷ উপরন্তু আমাদের বেশিরভাগ মুসলমান এমন এমন সব প্রশ্ন তুলেন যা কলিজায় গিয়ে লাগে।
প্রশ্ন করা হয়, নবীর আহলে বায়ত বা নবী পরিবারের সদস্য তো সবাই, প্রিয়নবীর ﷺ স্ত্রীগণ, বনু হাশিম, মাওলা আলির পরিবার সবাই আহলে বায়ত। তো আপনারা শুধু মাওলা আলি ও মা ফাতেমার পরিবার নিয়ে এত ব্যস্ত কেন?
ভাই! আহলে বায়তকে দুইভাগে ভাগ করা হয়েছে। আহল বায়তে আম ও আহলে বায়তে খাস। হুজুর রাসুলুল্লাহ ﷺই এই রাস্তা দেখিয়ে গেছেন। হ্যাঁ, নবীর ﷺ স্ত্রীগণ, বনু হাশিম, এমনকি নবীরﷺ দাস দাসী সবাই আহলে বায়ত বা নবী পরিবারের সদস্য। এমনকি নবীজী ﷺ সালমান ফারেসি রা. কে বলেছেন, সে আমাদের আহলে বায়ত। আমার পরিবারের সদস্য। উনারা আমভাবে সবাই নবী পরিবারের সদস্য।
কিন্তু সূরা আহজাব ৩৩ নং সূরার ৩৩ নং আয়াত যা মূলতঃ নবি কারিমের ﷺ পবিত্র স্ত্রীগণ সম্পর্কে নাজিল হয়েছে। এই আয়াতের শেষ অংশ নাজিল হওয়ার কারণে আল্লাহর হাবিব ﷺ মাওলা আলি, মা ফাতেমা, ইমাম হাসান ও হোসাইন রাঃ কে ডেকে সকলকে এক কালো পশমের তৈরি চাদরের ভেতরে নিয়ে দোয়া করলেন, "হে আল্লাহ! এরাই আমার আহলে বায়ত, এদের থেকে অপবিত্রতা দূর করে পবিত্রের মত পবিত্র করে দিন।" দেখুন নিচে তিরমিজি শরিফের হাদিসের (৩২০৫ ও ৩৭৮৭) স্ক্রিনশট দিলাম। সালাফি ভাইদের এপ্স। তারাই হুকুম দিয়েছেন এই হাদিসের মান সহিহ। আমার আর কিছু বলার প্রয়োজন নেই।
উম্মে সালামা রা. প্রিয় নবিজিরﷺ স্ত্রী, মুমিনদের মা এই হাদিসের বর্ননাকারী, তিনি নবীজীসহ মোট ৫ জনকে চাদরের ভেতরে নিয়ে এভাবে পবিত্রতার দোয়া করতে দেখে জিজ্ঞেস করলেন, "ইয়া রাসূলাল্লাহ ﷺ! আমি কী তাদের অন্তর্ভুক্ত না?" নবী করিম ﷺজবাব দিলেন, "তুমি স্বস্থানেই আছ এবং তুমিও কল্যাণের উপর আছ।"
এখানে সুস্পষ্টভাবে ৫ জনকে আলাদা করে আহলে বায়তে খাস বা আহলে বায়তের স্পেশাল সদস্যের মর্যাদা দেয়া হয়েছে। তাঁরা পবিত্র। এজন্যই আমরা পাক পাঞ্জাতন বলি। পবিত্র পাঁচ স্বত্তা। এটা শিয়াদের কনসেপ্ট না। সুন্নীদেরই হাদিসের কিতাবের কনসেপ্ট৷ দেখুন স্ক্রিনশটে আমি হাইলাইট করে দিয়েছি। এই হাদিসখানা মুসলিম শরিফেও এসেছে আম্মাজান আয়েশা সিদ্দিকা রাঃ থেকে, যা এই হাদিসের ভিত্তিকে আরো অনেক বেশি শক্তিশালী করে দেয়। (মুসলিম, হাদিস নং- ৬১৫৫, ই. ফা. ৬০৪৩)
মুসলিম শরিফের ৬১১৯ নং হাদিসে এসেছে, আল্লাহর হাবিব ﷺ বিদায় হজ্জ থেকে ফেরার পথে মক্কা মদিনার মাঝে গদিরে খুম নামক জায়গায় খুতবার সুরে বলছেন, "ইন্নি তারিকুন ফিকুমুস সাকালাইন, মা ইন তামাসসাকতুম বিহিমা লান তাদিল্লু" "আমি তোমাদের কাছে দুটো ভারী বস্তু রেখে যাচ্ছি যা আঁকড়ে ধরলে তোমরা পথভ্রষ্ট হবে না!" সেই দুটো ভারী বস্তু কী? কুরআন ও আমার আহলে বায়ত। আচ্ছা এই হাদিসে দুটো ভারী বস্তু বা সাকালাইন বলার কারণ কী? বিদায় হজ্জের ভাষনে কুরআন ও সুন্নাহকে তো দুটো বস্তু বলেছেন। ব্যাস। কিন্তু আহলে বায়তের আনুগত্যের প্রশ্ন আসতেই ভারী বস্তু বলেছেন। এর পেছনে হিকমত নেই?
অবশ্যই আছে। উল্লেখ্য যে, সুন্নাহ অনুসরণের বিদায় হজ্জের সেই হাদিস থেকে মুসলিম শরিফের আহলে বায়তের অনুসরণের এই হাদিস অনেক অনেক বেশি সহিহ। কারণ বিদায় হজ্জের সেই হাদিস মুয়াত্তা ইমাম মালিকে মুরসাল সনদে এসেছে। ইবনে মাজাহ ও ইমাম হাকিমের মুসতাদ্রাকের সনদও এত শক্তিশালী নয়৷ কিন্তু মুসলিম শরিফের আহলে বায়তের অনুসরণের এই হাদিস মুতাওয়াতির বা অকাট্য পর্যায়ের হাদিস। মা'নান মুতাওয়াতির বা অর্থগতভাবে মুতাওয়াতির, শাব্দিক নয়। কারণ ভিন্ন ভিন্ন শব্দে গদিরে খুমের এই ভাষনের প্রায় ৩০ টির উপরে ভিন্ন ভিন্ন সনদ আছে। তবে সুন্নাহও অবশ্যই মানতে হবে আমাদেরকে যা কুরআন মাজিদের অনেক আয়াত ও আরো অনেক হাদিসে আছে৷
কিন্তু আহলে বায়তের আনুগত্যের প্রশ্ন আসতেই প্রিয় নবিজি ﷺ ভারী বস্তু বলেছেন। এর পেছনে কারণ কী?
কারণ কুরআন ও সুন্নাহ মানতে আমাদের ইগোতে লাগে না, অহমে লাগে না। কিন্তু আহলে বায়তকে মানতে আমাদের ইগোতে লাগে। আমাদের মনের উপরে বোঝা হয়ে যেন নেমে আসে। মন চায় না আহলে বায়তের সুপুরিয়রিটি মেনে নিতে, উনাদের আনুগত্য মেনে নিতে। উনারাও মানুষ আমরাও মানুষ (মায়াজাল্লাহ) এমন চিন্তা চলে আসে ভেতরে।
খুলাফায়ে রাশিদিন (রাদিয়াল্লাহু আনহুম) কিংবা সাহাবায়ে কেরামের সুপিরিয়রিটি মানতে আমাদের ইগোতে লাগে না কেন জানি। আমি এটার দুটা কারণ অবশ্য বুঝতে পারি, জানি না আমি ভুল কী শুদ্ধ। খুলাফায়ে রাশিদিনের বংশধারা বর্তমানে ঐভাবে স্বীকৃত না আমাদের সমাজে। যেভাবে আহলে বায়তের আওলাদ সৈয়দগন প্রতিটি মুসলিম দেশে স্বীকৃত। কোথাও শরিফ নামে (মিসরে), কোথাও হাবিব নামে(ইয়েমেনে), কোথাও সৈয়দ নামে(বাংলাদেশ ভারত পাকিস্তান) , কোথাও শাহ নামে(রাশিয়ার বিভিন্ন দেশে)। কিন্তু আহলে বায়তের আওলাদগণ বংশধারা হিসেবে স্বীকৃত ও বিশেষ মর্যাদাপ্রাপ্ত সকল সমাজে৷ এই কারণে মূলত সৈয়দদের প্রতি হিংসার বহিঃপ্রকাশ হিসেবে আহলে বায়তের শ্রেষ্ঠত্বকে মানতে চায় না বেশিরভাগ।
আরেকটা কারণ হচ্ছে শিয়া-সুন্নী দ্বন্দ। শিয়াদেরকে অপছন্দ করার কারণে সুন্নীদের মাঝে আহলে বায়তের চর্চা খুবই কম। শিয়ারা যেহেতু মানতে মানতে অতিরঞ্জিত করে ফেলে সেহেতু সুন্নীরা মানতেই চায় না। বাড়াবাড়ি ও ছাড়াছাড়ি।
কীসব অদ্ভূত প্রশ্ন করে সুন্নী নামের কিছু আহলে বায়তের দুশমন (মূলতঃ এরা সালাফি ও আহলে হাদিস ওয়াহাবী ভাবধারা পোষণ করে)!।
তারা বলে, প্রিয় নবীরﷺ কন্যা ছিলেন ৪ জন, তো আপনারা শুধু ১ জনের আওলাদ একজনের পরিবার নিয়ে ব্যস্ত কেন?
ভাই, উত্তর খুব সহজ। কারণ, হুজুর রাসুলুল্লাহ ﷺস্বয়ং মা ফাতেমাতুজ জাহরার আওলাদদেরকে নিয়ে ব্যস্ত ছিলেন। এত সময় সে হাদিসগুলো বললাম আরো অসংখ্য অগুনিত হাদিস, সুন্নীদের কিতাব ভর্তি এই পরিবারের মর্যাদার হাদিস। এমনকি কুরআন মাজিদে ৮০০ আয়াত বলা হচ্ছে মাওলা আলির বিভিন্ন কাজের প্রেক্ষাপটে অবতীর্ণ।
আল্লাহ পাক স্বয়ং তাঁদেরকে এই বিশেষ মর্যাদা দিয়েছেন।
কুতর্ক ওঠে, খুলাফায়ে রাশিদিন থেকে হজরত আলিকে উপরে তোলার জন্য এরকম করে থাকেন আপনারা।
মায়াজাল্লাহ আস্তাগফিরুল্লাহাল আজিম। আমাদের আকিদা হচ্ছে, আল্লাহর হাবিব ﷺ র পর হজরত আবু বকর সিদ্দিক রাঃ সর্বোত্তম। আমরা প্রথম তিন খলিফার খেলাফাতকে নির্দ্বিধায় মাথা পেতে মেনে নিয়েছি। আপনাদের এই কুতর্ক শিয়াদের ব্যাপারে প্রযোজ্য। আমাদের সাথে নয়। তারা খুলাফায়ে রাশিদিনকে যা ইচ্ছা তাই বলে, নাউজুবিল্লাহ মিন জালিক।
নবীর স্ত্রী আমাদের মা, তাঁর মেয়ে হজরত ফাতেমা রা. কে মা কেন ডাকি?
সৈয়দদের জন্য তো এই প্রশ্নের জবাব খুবই সহজ। কারণ তিনি তাদের বংশের উর্ধ্বতন মা।
আর সাধারণ মুসলমানদের জন্য বলছি, মা হাওয়া আ. আমাদের মা, উনার মেয়ে নবীর স্ত্রীগণও আমাদের মা কুরআন মাজিদের সূরা আহজাবের ৬ নং আয়াত। আবার নবীর স্ত্রীগণের মেয়ে আমাদের জন্মদায়িনী মা। তারাও আমাদের মা। তাঁরা আমাদের মা-বাবারও মা, আমাদেরও মা। এটা কিভাবে? হুজুর রাসুলুল্লাহ ﷺ হজরত উম্মে আইমান রা. কে বলতেন, হিয়া উম্মি বাদা উম্মি। আমার মায়ের পরে তিনি আমার মা। ভাই এটা সম্মান শ্রদ্ধা ও ভালোবাসার বিষয়। এটা রক্তের সম্পর্কের কোন বিষয় তো নয়৷
প্রশ্ন আসেঃ আহলে বায়তের নিয়ে এত বাড়াবাড়ি কেন করেন?
বাড়াবাড়ি তো দূরে থাক আগে হক আদায় করতে পারেন কীনা দেখেন, তারপর তো আহলে বায়তের ব্যাপারে বাড়াবাড়ির প্রশ্ন আসে৷ ১ লক্ষ ভাগের একভাগ সম্মানও তো আমরা সুন্নী জনতা দিতে পারিনি আহলে বায়তে আতহারকে।
ওমাইয়ারা তো সারাজীবন নির্যাতন করেছে আহলে বায়তকে। একমাত্র হজরত ওমর ইবনে আব্দুল আজিজ রাহঃ ছাড়া। কারবালার জমিনে যা করেছে তা তো সবাই জানে। ৮০ বছর পর্যন্ত মাওলা আলিকে মিম্বরে মিম্বরে গালি দিয়েছে ওমাইয়া স্বৈরাচারী রাজারা। বিষপ্রয়োগে শহীদ করেছে ইমাম হাসান রা., ইমাম আলি জয়নুল আবিদিন, ইমাম মুহাম্মদ আল বাকির আ. থেকে শুরু করে আরো অনেক আহলে বায়তের গুরুত্বপূর্ণ ইমামকে। পরবর্তীতে আব্বাসিয়রা ক্ষমতায় এসেছে আহলে বায়তের দোহাই দিয়ে। তারা কারবালার প্রতিশোধ নেবে, আহলে বায়তের উপরে হওয়া অন্যায় জুলুমের প্রতিশোধ নেবে এসব বলে ক্ষমতায় এসেছে। কিন্তু তারাও কম অত্যাচার অবিচার করেনি ওমাইয়াদের থেকে। ইমাম যায়েদ বিন আলি, ইমাম নফসে জাকিয়্যাহকে নির্মমভাবে শহীদ করে দ্বিতীয় কারবালার অবতারণা করে তারা৷ ইমাম জাফর সাদিক ও ইমাম মুসা কাজিম থেকে শুরু করে আরো বহু আয়েম্মায়ে আহলে বায়তকে শহীদ করে তারা৷ এখানে কোন শাহাদাত ছিল কারবালার মত সরাসরি আর কোন শাহাদাত ছিল ইমাম হাসানের আ. শাহাদাতের মত ষড়যন্ত্রমূলক।
যুগে যুগে আহলে বায়তের ইমামগণ নির্যাতিত হয়েছেন। কোথায় তাঁদেরকে আমাদের মাথায় তুলে রাখা দরকার ছিল উল্টো তাঁদের উপরে নির্যাতন করা হয়েছে। আবার কথা ওঠছে আপনারা বাড়াবাড়ি করছেন আহলে বায়ত নিয়ে। আহলে বায়তকে যথাযোগ্য মর্যাদাই তো দিতে পারেনি এই উম্মত। বাড়াবাড়ির প্রশ্ন আসে কেন?
তাঁদেরকে ইমাম ডাকলে গায়ে লাগে কারো কারো। মসজিদের ফাজিল কামিল দাওরা পাশ আলিমকে ইমাম ডাকছেন এতে অসুবিধা নাই৷ ফিকহের ইমাম, হাদিসের ইমামকে ইমাম ডাকছেন অসুবিধা হয় না৷ আর ইমাম আবু হানিফা, মালিক, শাফিই, আহমদ ইবনে হাম্বল রাহ. যাদের পায়ের কাছে বসে শিক্ষা নিয়ে ইমাম হয়েছেন তাঁদেরকে ইমাম ডাকলে শিয়া হয়ে যায় মানুষ? আপনারা হিংসায় জ্বলে ওঠেন? আজব এক উম্মত আমরা!
মাওলা আলিকে মাওলা ডাকলে গায়ে লাগে। অথচ ফাজিল কামিল দাওরা পাশ হুজুরকে "হে মাওলানা" বা "হে আমাদের মাওলা" বলে ডাকছেন, তখন গায়ে লাগে না। তিরমিজির ৩৭১৩ নং সহিহ হাদিসও চোখে পড়ে না? মান কুন্তু মাওলাহু ফা আলিয়্যুন মাওলাহ। আমি নবী যার মাওলা আমার আলি তার মাওলা। শিরক হয়ে যায় তাই না? কী অবিবেচক এই উম্মত! অথচ সূরা তাহরিমের ৪ নং আয়াতে আল্লাহ পাক বলছেন, "আর আল্লাহ তাঁর (নবীজীর সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)মাওলা, আর জিবরিলও এবং নেককার মুমিনগণও"। আল্লাহর শানে মাওলা শব্দ আসলে তা ব্যাপক অর্থে মালিক, প্রতিপালক, সৃষ্টিকর্তা, সাহাযুকারী বুঝায়, আর সৃষ্টির ক্ষেত্রে আসলে অভিভাবক, বন্ধু, প্রাণের চাইতে অধিক প্রিয় ইত্যাদি যা সীমিত অর্থে বুঝায়। এতটুকু সেন্স নেই? মানুষও রহিম বা দয়ালু হয়, আল্লাহ পাকও দয়ালু। দুটো কী একই অর্থে? একটা সীমিত আরেকটা অসীম।
“আহলে বাইতের নামের শেষে আলাইহিস সালাম ব্যবহার করা যাবে কি যা‌বে না”। এ সম্পর্কে হাদিসের ইমামগণ আহলে বাইতের নামে আলাইহিস সালাম ব্যবহার করেছেন কিনা?
১. বুখারী শরীফে ২০৮৯, ৪৯৭৪, ৩৭৪৮, নং হাদিসের সনদের মধ্যে ইমাম বুখরী আহলে বায়তের সদস্যগণের নামের শেষে আলাইহি সালাম ব্যবহার করেছেন।
২। ইমাম আবু দাউদ রাহ. আবু দাউদ শরিফে ১২৭২ নং হাদিসঃ
عَنْ عَلِيٍّ عَلَيْهِ السَّلَام،
এভাবে সুনানে আবি দাউদের হাদিস নং- ১৫৭৪, ২০৭৭, ২৯৮৪, ৩২১৪, ৩৫৮২, ৩৬৯৭, ৩৮২৮, ৩৮৫৬, ৪৪০২, ৪৪০৩, ৪৩৫১, ৪৬৩০, ৪৬৪৬, ৪৬৪৯, ৪৫৩০, ৪৭৭০, ৪৯৬৭, ৫০৬৪ ও ৫১৫৬-তে মাওলা আলীর নামের শেষে আলাইহি সালাম ব্যবহার করা হয়েছে।
৩। ইমাম আহমদ বিন হাম্বল স্বীয় হাদিসের গ্রন্থ ফাজায়েলে সাহাবা-এর মধ্যে বিভিন্ন স্থানে মাওলা আলীর নামের শেষে আলাইহিস সালাম ব্যবহার করেছেন। যেমন, ১২২৯ নং হাদিস
قَالَ عَلِيٌّ عَلَيْهِ السَّلَامُ
এভাবে ফাজায়েলে সাহাবা গ্রন্থের হাদিস নং-১১৩০, ১৩২৩, ১৩২৬, ১৩৩৪, ১৩৬৪, ১৩৬৯, ১৩৭২, ১৩৮৫, ১৫৮৪- তে মাওলা আলীর নামের শেষে আলাইহিস সালাম ব্যবহার করেছেন।
কী শুরু হয়েছে চারদিকে শুধু শিরক আর বেদাতের জপ। বুঝে না বুঝে। আহলে বায়তের শানে কিছু বললেই শিয়া রাফেজির ট্যাগ দেয়া শুরু হয়।
পরিশেষে, এই মুহাররম মাস যাচ্ছে অথবা মাওলা আলির শাহাদাতের মাস রামাদান অথবা মা ফাতেমার ওফাতের মাস কিংবা ইমাম হাসান রাঃ এঁর শাহাদাতের মাস, আমরা কজন সুন্নী ভালো কিছু আর্টিকেল লিখছি আহলে বায়তের শানে? হ্যাঁ, বিচ্ছিন্ন দুই চার লাইনের ফেসবুক স্টেটাস। ইয়াজিদকে গালমন্দ৷ হ্যাঁ, ইয়াজিদকে লানত দেয়ার প্রয়োজন আছে বৈকি৷ কিন্তু আহলে বায়তের শানকে একাডেমিকেলি তুলে ধরার প্রয়োজনীয়তা তার চাইতেও হাজার গুণ বেশি। কয়টা ওয়াজের মঞ্চে একাডেমিক কিছু কথা ওঠে আসছে আহলে বায়ত সম্পর্কে? হ্যাঁ, ওয়াজের মঞ্চে পাবলিক ডিমান্ডের কারণে হাদিয়ার জন্য কিছু আলোচনা হয়। কিন্তু লেখালেখিতে পয়সা নাই তো। তাই আহলে বায়তের শানে লেখাও বের হয় না আমাদের কলম থেকে।
অথচ আহলে বায়ত বিরোধীরা ইনিয়ে বিনিয়ে ইয়াজিদকে দায়মুক্তি দিচ্ছে। কারবালার ইতিহাসকে বিকৃত করে লেখা ও ভিডিও দিয়েই যাচ্ছে।
এক আজব উম্মতে আমরা পরিণত হয়েছি।
আল্লাহ পাক খাস রহমত করুন আমাদের উপর। আহলে বায়তের গোলামিতে আমাদেরকে কবুল করুন। আমাদের আদর্শে আমরা যেন আহলে বায়তকে ধারণ করতে পারি এবং অবশ্যই হৃদয়ে। আমিন।

Theme images by Flashworks. Powered by Blogger.